নামলো আঁধার পাহাড়তলে : বনভূষণ নায়ক

নামল আঁধার পাহাড়তলে : বনভূষণ নায়ক
নামল আঁধার পাহাড়তলে : বনভূষণ নায়ক

হিমালয়-পথিক বনভূষণ নায়ক অতিপরিচিত এক নাম। এবং অধমের ধারণা, কথাশিল্পী হিসেবে তিনি সকলের কাছে অধিক আদৃত। গল্প বলায় তাঁর জুড়ি নেই। পুরনো একটি অভিযানের কথা কোলাজের ভঙ্গীতে তুলে ধরেছেন এই লেখায়। বনভূষণ নায়ক’র কলমে ঘটনা উঠে আসে অরূপকথার মতো!

[এক]      অনেকটা আবছা হয়ে গেলেও এখনও কিছু কিছু মনে পড়ে ওই সময়ের কথা। সে এক অতি বেদনাদায়ক অস্থির মুহূর্তের কথা। একটা শৃঙ্গ অভিযানে গিয়ে অত্যন্ত সফল হওয়ার পরও যে এমন সংকটে পড়ে যেতে পারে কোনও অভিযাত্রী দল, এটা ভেবে ওঠা সহজ হয় না। এবং শুধু তাই নয়, দলটির মানসিক বিপর্যয় পাহাড়প্রমাণ হয়ে ওঠার পরপরই যে অন্য দলটি এসে উপস্থিত হয় তাকেও ব্যাপকভাবে গ্রাস করে নেয় অনুরূপ বিপর্যয়,এমন ঘটনাও খুব একটা শোনা যায় না। কিন্তু এমনটিই ঘটেছিল। আজ সহসা মনে পড়ে গেল।

তিন দশক আগেকার কথা। শৃঙ্গটির নাম ‘কালানাগ’ বা‘ব্ল্যাক পিক’ (২০,৯৫৬ফুট)। দুন উপত্যকার রুইসারা হিমবাহের সন্নিকটে অবস্থিত কালানাগ। আপার কেয়ারকোটিতেই সাধারণত অভিযাত্রীরা মূল শিবির স্থাপন করে। ওই স্থানটি একদা দুন স্কুলের স্বনামধন্য শিক্ষক ও কৃতী পর্বতারোহী জে.টি.এম. গিবসন এবং তাঁর সহযোগী শিক্ষক ও যথেষ্ট অভিজ্ঞ পর্বতারোহী জ্যাক মার্টিন,  গুরদয়াল সিং এবং হরিডাঙ প্রমুখদের বিচরণ ক্ষেত্র ছিল। দুন উপত্যকার পাহাড়ি এলাকাগুলি বিশদভাবে আরোহন ও সমীক্ষা করার ব্যাপারে একদা এঁরা বিশিষ্ট ভূমিকা গ্রহণ করেন। এঁদের সঙ্গে পরে যোগ দেন তেনজিং নোরগে ও নন্দু জয়াল। হরি-ডাঙের নেতৃত্বে একটি দল ১৯৬৮ সালের ১৪ ই জুন প্রথম কালানাগ শৃঙ্গে আরোহন করে। সফল আরোহীরা হলেন জি. অগ্রবাল ও নিমা।

পশ্চিমবঙ্গের ক্লাইম্বার্স সার্কেল একানব্বই সালের আগস্ট মাসের শুরুতে প্রথম দল হিসাবে সেবার কালনাগ শৃঙ্গে গিয়ে এক চমত্কার সাফল্য তুলে আনে। অভিযানের দলনেতা ছিলেন অমিতাভ চক্রবর্তী। বয়সে নবীন হলেও অত্যন্ত যোগ্য হওয়ার জন্য তাকে সেবার দলনেতার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। গোড়া থেকে প্রায় শেষ অবধি দল পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রখর মুনশিয়ানা প্রদর্শন করায় সে সহযাত্রীদের কাছে থেকে প্রচুর বাহবা লাভ করে।  দলনেতা সহ মোট ছ’জন শৃঙ্গে আরোহন করেন।  কোথাও কোনও দুর্যোগ বাদুরূহ বাধার মুখে দলটিকে পড়তে হয়নি। যাক, তখন অভিযান শেষ।শেষ দিকের অভিযাত্রীদের তখন মূলশিবিরে ফেরার পালা। কোনও প্রয়োজন না থাকলেও সদা তৎপর তরুণ দলনেতা পিছনে থাকা অভিযাত্রীদের সাহায্য করতে বেড়িয়ে পড়েন। দলের প্রবীণতম আরোহী স্বপন দত্ত অনিচ্ছা স্বত্তেও তাঁকে ওপরে ওঠার অনুমতি দেন। এই অতিরিক্ত তত্পরতাই এক্ষেত্রে কাল হয়ে দাঁড়ায়। অতি দ্রুত দলের কাছে পৌঁছতে অমিত একটাশর্টকাট ধরে এগোয়। অথচআগে যাওয়ার সময় ওই পথটি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হওয়ায় বাতিল করে অন্য পথ ধরেছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, প্রথম ভুলটি তাকে বিপদে নাফেললেও সেই একই পথ ধরে ফিরে আসার সময় বরফের পাতলা আস্তরণ ভেঙে এক চোরা ফাটলে সেঁধিয়ে যায়। তখন অমিতের সঙ্গে ছিল রাজীব সন্ন্যাস। একই পথ সে দিব্যি পার হয়ে যায়।  দশ কদমের সামান্য বেশি পিছনে থাকা অমিতের ক্ষেত্রে তা কিন্তু সম্ভব হয় নি।

বিশদে না গিয়ে শুধু এটুকু বলে দেওয়া ভালো যে, খুব দেরী না হলেও ওরকম পরিস্থিতিতে অমিতকে ক্রিভাস থেকে তুলে আনতে যথেষ্ট সময় লেগে যায়। ওই ঠান্ডায় তার মাথা পর্যন্ত হিমশীতলজলে ভিজে যায়। বিবিধ ওষুধপত্র প্রয়োগ সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

অমিতের জীবন নিয়ে যখন ডাক্তার ও যমের মধ্যে লড়াই প্রবলভাবে জারি ছিল তখন বনভূষণ নায়ক এক আরামদায়ক চেয়ারে বসে ঝিমোতে ঝিমোতে দেরাদুন থেকে সাঁকারির পথে, সঙ্গে হিমপথিক পর্বতারোহণ সংস্থার এগারো জন অভিযাত্রী বন্ধু। হিসেব করে দেখা গেল, সার্কেলের কালানাগ শৃঙ্গের অভিযান ততদিনে শেষ হওয়ার মুখে। এবং সবারই ধারণা, অভিযান পুরোপুরি সফল হয়েছে। তবে ঠিক কী ঘটেছে তা জানার কোনও উপায়নেই। স্বভাবতই সবাই উদগ্রীব জানতে, অভিযানের হাল কী?একটা অস্বস্তি আর অপূর্ণতার ছায়া ফেলেছিল সবার মনে, কারণ ওই অভিযানের  সঙ্গে হিমপথিকের কালানাগ অভিযানের লেন-দেনা ছিল বিস্তর। বলা যেতে পারে, ওই দুটি অভিযানকে কালানাগ-১ ও কালানাগ-২, এভাবে ধরে নেওয়াই বাঞ্ছনীয়।

তিন দশক আগে প্রতিটি পাহাড়ি সংস্থারই প্রস্তুতিতে কোথাও না কোথাও ফাঁক থাকত, বিভিন্ন স্তর ও পর্যায়ে। কোনও সংস্থার আনুপাতিক হারে তেমন ট্রেনড্ সদস্য থাকতো না। কারও হাতে হয়তো বা তেমন দরকারি সাজ-সরঞ্জাম মজুত থাকত না। ফলতঃ, পারস্পরিক সহযোগিতার প্রয়োজন পড়ত খুব।  সাতাত্তরে গড়ে ওঠা সার্কেলের সঙ্গে তিরাশির হিমপথিকের কীভাবে যেন এক ঈর্ষনীয় সখ্য তৈরী হয়েছিল, যা আজও অটুট। তাই ঈষত্ পিছিয়ে থাকা হিমপথিকের প্রথম অভিযান যাতে কোনও ভাবেই অসুবিধায় না পড়ে তা দেখার দায়িত্ব নিয়েছিল সার্কেলের অমিতাভ চক্রবর্তী।  হিমপথিকের উজ্জ্বল চক্রবর্তী ও গৌতম চক্রবর্তী সব অর্থেই সার্কেলের ঘরের মানুষ ছিল। বিশেষ করে সার্কেলের অমিত ও আর্য এবং হিমপথিকের উজ্জ্বল আর গৌতমের মধ্যে এক মনমাতানো সখ্যের সম্পর্ক ছিল।  স্বভাবতই দুটি সংস্থা নিজেদের নক্সা ও ছক মাফিক দুটি অভিযান কে সাজিয়ে ছিল। এমনকি প্রথম দলের অভিযান শেষ হওয়ার পরেও পরের দলের কোন সদস্য কোন ক্লাইম্বিং বুট পায়ে দেবে তা পর্যন্ত স্থির করা ছিল। এসব ব্যাপার দুই দলের চার মাথার  মধ্যে থাকলেও প্রায় সবটাই অমিতের তালুবন্দী ছিল।

 

৷ [২] কেয়ারকোটির মূল শিবিরে পৌঁছনোর আগেই সেই মর্মান্তিক খবর হিমপথিকের সদস্যদের কানে আসে। খবরটা এতোটাই আকস্মিক এবং অবিশ্বাস্য যে হিমপথিকের সদস্যরা সহসাই স্থানুবত্ হয়ে পড়ে।  শুধু তাই নয়, এমন এক পরম স্ব-হৃদের প্রয়াণে সবাই খুব ভেঙেও পড়ে। এমনকি, হিমপথিকের প্রাণ-পুরুষ প্রদীপ চক্রবর্তী,  যাঁকে সবাই ‘পদুদা’বলেই চেনে তিনিও ভারী অসহায় বোধ করলেন। সত্যি কথা বলতে কি, দলনেতা অর্থাত্  বনভূষণ নায়কেরও এক দশা। এক অর্থে, চুরমার কান্ড!

এটা কী করে হল!

বিষ্ময়ে স্থির প্রতিটি মানুষ। তবে তারই মধ্যে একটা উপায় বের করা হল। যতই হোক, অন্য একটা পৃথক অভিযাত্রীদল উপরে উঠতে তৈরী। যতই গভীর হোক সম্পর্ক, সেই দলটি চলবে তাদের এ্যজেন্ডা মোতাবেক। তাদের জন্য সহযোগিতার হাত প্রসারিত হল আশ্চর্য নীরবতায়। হিমপথিকের অভিযানের দলনেতা যিনি একই সঙ্গে তিনি ক্লাইম্বার্স সার্কেলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও বটে। তিনি আলোচনায়বসে সিদ্ধান্ত নিলেন – অভিযান অভিযানের মতো চলতে থাকবে, তবে সেই সঙ্গে প্রয়াত অভিযাত্রীকে যতটা সম্ভব নীচে নামিয়ে আনার কাজেও সবাই যথাসাধ্য হাত লাগাবে। আসলে তদানীন্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেষ্টা সত্ত্বেও সেদিন হেলিকপ্টার রেসকিউ সম্ভব হয় নি। মাত্র এক বার শব্দ শোনা গেলেও নজরে পড়েনি কোনও হেলিকপ্টারের।

এমন একটা পরিস্থিতিতে সাধারনত টালমাটাল অবস্থার উদ্ভব হয়। সেদিনে তা কিন্তু হয়নি। প্রথম অভিযানের দলনেতা মৃত। তাঁর বডি একনম্বর ক্যাম্পে বরফের ওপর পাথর প্রাচীর দিয়ে সুরক্ষিত করা। তাঁবু লাগিয়ে করমর্দন দূরত্বে থেকে অভিযাত্রীরা স্নো-ফক্স তাড়াতে মরিয়া সংগ্রামে ব্যস্ত। দ্বিতীয় দলের দলনেতা লোকাভাবে দুদিন একা থেকে সে কাজ করে গেছেন । আসলে অভিযানে কারও মৃত্যু হলে পাহাড়ি মানুষজন সেই অভিযানের সঙ্গে আর যুক্ত থাকতে চায় না। এমনকি তাদের সঙ্গে রাখাই কঠিন হয়ে পড়ে। পড়েছিলও। তবু ওই অবস্থায় হিমপথিকের ছেলেরাওদের জন্য সাজানো ক্লাইম্বিং বুট থেকে বেছে নিয়ে পায়ে লাগিয়ে উপরে উঠেছে। সংখ্যায়কম হলেও উঠেছে।

তার মধ্যে বনভূষণ নায়কের নেতৃত্বে আর্য ও গৌতম অমিত যে ক্রিভাসে পড়ে যায় সেখান থেকে বেশ কিছু ক্লাইম্বিং সরঞ্জাম পুনরুদ্ধার করতে সমর্থ হয়। এবং অনেকটা এগিয়ে কালানাগ শৃঙ্গের পথও তারা দেখে আসে। তা থেকে ধারণা করা হয়, দুজন ফিট এবং এগিয়ে যেতে আগ্রহী সদস্য সঙ্গে থাকলে দলনেতার পরামর্শ নিয়ে সামিট ক্যাম্প থেকে চূড়ায় ওঠা নিশ্চয়ই সম্ভব। শৃঙ্গ হিসাবে কালানাগ মোটেও অতি দূরূহ পর্যায়ের নয়। মোটামুটি দৃঢ় সঙ্কল্প হয়ে এগিয়ে যেতে থাকলে শীর্ষে পৌঁছানো অসম্ভব নয়।

এরকম একটা আশার আলো যখন দেখা গেল, তখনই জানা গেল, অতি অভিজ্ঞ এবং অতীতে একবার কালানাগ শৃঙ্গে ওঠা শিবরাজ সিং বেশি উচ্চতায় ওঠার মতো শারীরিক অবস্থায় নেই। খবরটা শোনার পর আমি খুব একটা অবাক হইনি। শিবরাজজীর চলাফেরা দেখে আমি বুঝে গেছিলাম, সে কোনও মতে দু-নম্বরে কিছু মাল ফেলে আসতে পারে। আরওপরে ওঠাতার কম্ম নয়। হতাশ হলেও তখনও আশা ছাড়িনি। আর্যসঙ্গে যেতে রাজি হওয়ায় গৌতম আমি মিলে একটা শেষ চেষ্টা করতে চেয়েছিলাম। তবে সেটা সম্ভব হয় নি।৷ কারণ গৌতম ওই অস্বস্তিকর পরিমন্ডলে থেকে অনেকটাই মনের জোর হারিয়ে ফেলেছিল।

স্বাভাবিক। অহর্নিশ থানা, পটোয়ারি সরপঞ্চ থেকে লোকের আনাগোনা অভিযানের খাস দোরগোড়ায়।  অমিতের বডি রুইসারা তালে নামাতে নেপালী জড়িবুটি খুঁড়ে আনা মানুষজনের সঙ্গে পয়সা নিয়ে দরকষাকষি, দলের মালবাহকদের অসহযোগিতা, অত্যধিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় দুই দলের ভাঁড়ারে টান ইত্যাদি মিলে -সত্যি কথা বলতে, বেশ বিপর্যয়ের পরিস্থিতি। তার প্রভাব গৌতমের উপরেও পড়েছিল। সঙ্গত কারনেই সে-ও পিছিয়ে আসে। তবে এসব সত্ত্বেও দুটি দল অত্যন্ত শান্ত পরিণত ভাবনায় কঠিন সময়েও এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছিল। যা চরম ঘাত-প্রতিঘাতে আহত এই দলনেতার কাছে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা। অ্যাডভেঞ্চারকে বুকে ধরে লালন ও পরিচর্যা করার যে এ এক দুর্লভ শিক্ষা, তা কে অস্বীকার করবে?

সক্ষম হলেও জনা দুই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, অমিতের মৃতদেহের পাশ দিয়ে তারা শৃঙ্গ আরোহনে যেতে রাজি নয়। কেউ কেউ ইচ্ছে থাকলেও ভয় পেয়ে গেছিল। প্রথম অভিযানে এসেই এমন ভয়ংকর অভিজ্ঞতা সবাই মেনে নিতে পারে না। অভিযানে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে উচ্ছ্বাসের বন্যা বয়ে যায়।  বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতে ওঠে প্রতিটি সদস্য যখন তারা সাফল্যের স্বাদ পায়। এমনকি, সাফল্য ঝাঁকা ভর্তি হয়ে ঘরে এলেও আচমকা চেপে বসা কোনও সংকট পুরো দলকেইএক মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিতে পারে।

যেমন একানব্বই–এ, ওই সংকটজনক পরিস্থিতির সামনে পড়েছিল দুটি অভিযাত্রী দল – ক্লাইম্বার্স সার্কেল ও হিমপথিক। তবু বিন্দু মাত্র হাঁক-ডাক না করেও বলা যায়, দুটি দলই অবাক করা সংযম ও অবিশ্বাস্য সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হয়েছিল।

মনে পড়ে, রুইসারা তালে অমিতের দাহ পর্ব। সুদূর কলকাতা থেকে গিয়ে উপস্থিত হয়েছিল অরিন্দম, অমিতের দাদা, যে আবার সার্কেলের পুরনো সদস্য। সেই অরিন্দম-ই অমিতের চিতায় আগুন দেয়। সারিবদ্ধ দুই দলের সদস্যদের মধ্যে তখন একটাই আক্ষেপ, অমিতের দেহনিয়ে কলকাতায় ফেরা গেল না। অথচ তার ছাব্বিশ বছর পর সেই অরিন্দমের দেহ কিন্তু কলকাতায় ফিরে এসেছিল। তখনও আক্ষেপ ছিল একটাই, দাদার শেষ কৃত্যে অমিতের হাজির থাকতে না পারা। প্রসঙ্গত বলে রাখা দরকার,  ২০১৩ সালের মে মাসে অরিন্দম চক্রবর্তী বি.এম.টি. আয়োজিত ছেলেমেয়েদের পিন্ডারি ট্রেক-এর গাইড হয়ে দলে গেছিলেন। ফেরার পথে খাতিতে পৌঁছানোর সামান্য আগে মাত্র দশফুট নীচে পড়ে যান। সুস্থই ছিলেন। ব্যাপারটা যে বিপদের কারণ হতে পারে মনেই হয় নি। কিন্তু পরে তার অবস্থা খারাপ হতে থাকে, অবশেষে তিনি মারাই যান।

 

[তিন]         একানব্বই-এর ওই দুটি অভিযান, সত্যি বলতে কি, এমন কোনও অভিযান নয়যে, যা নিয়ে লেখা যায়। তবু লিখলাম এই ভেবে, যদি কখনো কোনও অভিযাত্রী দল বা আগে পিছে থাকা অন্য কোনও দল সংকটে পড়ে যায় তারা, আর কিছু না হোক, একটা সূত্র খুঁজে পেতে পারে। অ্যাডভেঞ্চার তো ঠিক এভাবে কেউ করতে যায় না। সে আচমকাই সামনে এসে দাঁড়ায়।  সূত্র মেনে এগোলে একটা বিহিত করা সম্ভব হয়। আবার এমনটা না-ও ঘটতে পারে। তবে তার জন্য হতাশাচলে না। শুধু মনে রাখা দরকার -সূত্র ধরে এগোনো হ’লঅ্যাডভেঞ্চারের সঙ্গে পাঞ্জা কষার প্রাথমিক শর্ত। সেখানে যেন কোনও ফাঁক না থাকে। অভিযাত্রীরা সেটাই দেখবেন। প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে হিমপথিক সংস্থা থেকে একটা ক্লাব-পত্রিকা প্রকাশ করা হয়। আমার বিচারে সংখ্যাটি পাহাড়ি ক্লাবের প্রকাশনা হিসেবে অন্যতম শ্রেষ্ঠ। সেখানে ১৯৯১-র ওই অভিযান নিয়ে উজ্জ্বল চক্রবর্তী অনেক চিঠির একটি সংকলন সাজিয়ে তুলে দিয়েছেন। নাম দিয়েছেন, “আকাশ ছোঁয়া অভিযান”। সত্যি কথা বলতে কি, আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না এটা উজ্জ্বল-এর কাজ। সে সর্বদাই আড়ালে থাকতে ভালবাসে। ওই প্রথম সে উঠোনে এসে দাঁড়ায়। আলোচ্য লেখাটিসব অর্থেই সংযম, সহিষ্ণুতা, সহমর্মিতা ও সহযোগিতার এক বিষ্ময়কর আখ্যান। পড়ে দেখতে পারেন।

লেখাটি যদি পাঠকবর্গের বিরক্তির কারণ হয়ে দেখা দেয় তার জন্য আগাম ক্ষমা প্রার্থনা করে রাখলাম। রুদ্র ( রুদ্র প্রসাদ হালদার) এখন অনেক বড় হলেও সে আমার ছোট ভাই। তার আবদার ফেলা বড় কঠিন। লিখতেই হল।

শেয়ার করুন সবাইকে
error: Content is protected !!