মেসোকান্টো-লা পেরিয়ে মুস্তাং : সুমন্ত রায়

মেসোকান্টো-লা পেরিয়ে মুস্তাং : সুমন্ত রায়
মেসোকান্টো-লা পেরিয়ে মুস্তাং : সুমন্ত রায়

নেপালে সম্ভবত সর্বাধিক জনপ্রিয় ট্রেকপথ ‘অ্যারাউন্ড অন্নপূর্ণা’ বা ‘অন্নপূর্ণা সারকিট’। আমরা নব্বইয়ের শুরুতে কাঠমাণ্ডু থেকে ডুমরে হয়ে ভোটেওদার পৌঁছে হাঁটা শুরু করেছিলাম। খুদি, বাহারাণ্ডা, তাল, চামে, পিসাং হয়ে মানাং। ভাবলে অবাক লাগে, এখন সেই মানাং পর্যন্ত চলে যাচ্ছে গাড়ি! মানাং থেকে খাস রাস্তাটা গেছে ডানদিকে, জারগেনখোলা স্রোতের বিপরীতে, থোরাং-লা পেরিয়ে মুক্তিনাথ। স্বল্প প্রচলিত রাস্তাটা গেছে সামনে তিলিছো পর্বতের পাশ দিয়ে দুর্গম মেসোকান্ত-লা পেরিয়ে জমসম। যদি কেউ চান, জমসম থেকে একদা নিষিদ্ধ এলাকা মুস্তাং উপত্যকায়ও প্রবেশ করতে পারেন। এখানে সেই বিচিত্র পথের ভ্রমণবৃত্তান্ত লিখেছেন সুমন্ত রায়।

আকাশ মেঘলা, এত জোরে হাওয়া দিচ্ছে যেন মনে হচ্ছে উল্টে পড়ে যাব। পিঠের স্যাক আরো পিছন দিকে টানছে, আমি আর সুমিত একটা ঢাল এর গায়ে দাঁড়ালাম। পথ নেমে গেছে নিচের দিকে। একটা একটা পাথর ধরে নামছি ছোট্ট খরস্রোতা একটা নদীর কাছে। নদীর কাছে এসে দেখতে পেলাম পাহাড়ের ঢালে আঁচড় কাটা দাগের মত আমাদের পথ ওই দূরে পাহাড় এর মাথায় উঠে আকাশে মিলিয়ে গেছে।

মেসোকান্ত-লা ট্রেক প্রোগ্রাম এর একবছর আগে থেকেই এজেন্সির সাথে সমস্ত কথা সেরে রেখেছে শুভময়-দা। নেপালের এই অঞ্চলে ট্রেক প্রোগ্রাম করার অনেক আইনি প্রতিবন্ধকতা আছে। তাই প্রোগ্রাম শুরুর আগেই শুভময়-দা আর বৌদি কাঠমান্ডু চলে যায়, সেখানে মিনিস্ট্রি অফ ট্রুরিজম এ গিয়ে রীতিমত ইন্টারভিউ দিয়ে তবে আমাদের সবার পারমিট পাওয়া যায়। আসলে ভারতীয়রা মুস্তাং ভ্যালির দিকে খুব একটা যায়না, কারন ৫০০ ইউএস ডলার, অর্থাৎ ৩৫.০০০/- টাকা লাগবে জনপ্রতি মুস্তাং-এ প্রবেশের অনুমতি পত্র পেতে গেলে।

ট্রেনপথেরক্‌সোল এ আমরা নামলাম বেলা বারোটায়। যেহেতু এবছর এজেন্সির সাথে ট্রেক হচ্ছে তাই পিঠের স্যাক ছাড়া আর কিছুই সঙ্গে নেওয়ার নেই। প্লাটফর্ম থেকে বেরিয়ে ইতি-উতি তাকাতেই একজন গাড়ীর ড্রাইভার এগিয়ে এসে পরিচয় দিয়ে জানালো এজেন্সি থেকে এসেছে। স্যাক গাড়ির মাথায় তুলে বসলাম গাড়িতে। প্রচণ্ড গরমে কিছু দূর গিয়ে গাড়ি আটকে গেল যানজটে। সীমান্ত পার হয়ে আমরা এলাম বীরগঞ্জ। খাওয়া দাওয়ার পর্ব সেরে নেপালের সিম-কার্ড জোগাড় করে আমরা চললাম বেশিশহর এর উদ্দেশ্যে, রাস্তা খুব ভাল নয়। বিকেলের দিকে আমরা শহর ছেড়ে পাহাড়ের অনেকটা কাছে এসে পড়েছি। কিছুক্ষণ এর বিরতি। আবার গাড়ী ছুটল ধুলো উড়িয়ে। সন্ধের দিকে এসে পৌছালাম বেসিশহর। শুভময়-দা আমাদের সাথে ওখানে এসে মিলিত হল। মোটামুটি গল্প আড্ডায় রাত কেটে গেল।

পরের দিন সকালে আবার দীর্ঘপথ গাড়িতে থাকা, তাই ভোর ভোর উঠে তৈরি হয়ে নিলাম।সময়মতো গাড়ীও প্রস্তুত। ভীষণ কষ্টকর একটা পথ শেষ করে এসে নামলাম মানাঙ গ্রামে। গাড়ীর পথ এখানেই শেষ, এর পর শুরু হবে পায়ে পায়ে চলা।কাঠের দোতলা ট্রেকাস হাট। পাশেই রান্নাঘর। নিচে ডাইনিং হল বেশ বড়। সন্ধ্যে হতেই ঠাণ্ডার প্রকোপ বাড়ল, সঙ্গে হাওয়া দিচ্ছে। দেশ বিদেশের অভিযাত্রীরা ভীড় জমিয়েছে। আরো কিছু ট্রেক শুরু হচ্ছে এই মানাঙ থেকে। সাত-আটশো বাড়ি নিয়ে হাজার পাঁচেক মানুষের বসতি এই মানাঙ গ্রামে। অন্নপূর্ণা পর্বত থেকে বেরোনো মারসিংডি নদীর উপত্যকায় অবস্থিত এই গ্রাম। মানাঙ এর একদম পাশে অন্নপূর্ণা তৃতীয়, গঙ্গাপূর্ণা ও খান্সার-কাঙ পর্বত আর মানাঙ্গ থেকে থোরাংলার দিকে যে পথ গেছে সে দিকে আছে খাটুং-কাং ও ইয়াকাত্তা-কাং পর্বত।

পরের দিন সকাল আমাদের পথ চলা শুরু। ঝকঝকে নীল আকাশ, দূরে দেখা যাচ্ছে গ্রেট বেরিয়ার। তিব্বতী গ্রাম মানাঙ্গের ভেতর দিয়ে চলা শুরু হল।কিছু দূর গেলেই গ্রাম শেষ। মারসিংডি নদীকে বাঁয়ে রেখে আমাদের পথ।কিছুটা চলার পরেই শুরু হল রুক্ষতা। কোন গাছপালা নেই, হাঁটু সমান ছোট ছোট ঝোপ বিক্ষিপ্ত ভাবে এদিক ওদিক ছড়িয়ে চারিদিকে ধুলোয় ধুসরিত, দূরদুরান্ত জনমানব হীন।চলার ফাঁকে মাঝে মধ্যে বিরতি রোদের তাপে, আর তার সাথে ঠাণ্ডা হাওয়া। আজ আমাদের গন্তব্য শ্রীখরকা। বেশ কয়েক ঘণ্টা চলার পর দুরে দেখা গেল ছোট জনবসতি, কয়েকটা ছোট হোটেল আর কিছু বাড়ি নিয়ে একটা তিব্বতী জনপদ ঘাংমার গ্রাম। সেখানে পৌছালাম বেলা দুটোয়। চা বিরতি এখানেই। কিছুক্ষণ এর ব্রিশ্রামের পর আবার এগিয়ে যাই। যেতে যেতে কিছু বিদেশী ট্রেকার এর সাথে সৌজন্য বিনিময় হয়। নদী উপত্যকা ছেড়ে অনেকটা ওপরে উঠে এসেছি। ঝুড়ো পাথরের পথ, পাহাড়ের গা ধরে সার বেঁধে চলেছি। নদী এখন সোনালী সুতোর মত দেখতে লাগছে।

সামান্য চওড়া পথ যেখানে শুধু দু পা রাখা যায়। প্রায় বেলা চারটের সময় এসে দাঁড়ালাম একটা চড়াই এর সামনে। এঁকে বেঁকে পথ উঠে গেছে ছোট ছোট পাতা বিহীন ঝোপের মধ্যে দিয়ে। দূরে দেখা যাচ্ছে শ্রীখরকা-র ট্রেকাস হাট। কিছুটা উঠে পথ দুভাগে বিভক্ত হল, একটা উঠে গেল শ্রীখরকার দিকে, আর একটা বাইপাস রুট রুট চলে গেছে থোরাং-লা’র দিকে। প্রায় বিকেলের দিকে গিয়ে পৌছালাম ট্রেকার্স হাট এ। গোধূলি আলোয় গঙ্গাপূর্ণা সোনালী চাদরে মুড়েছে।হাওয়ার প্রকোপ শুরু হয়েছে। এখানে ট্রেকাস হাট এর নিচে ডাইনিং হল এ বিভিন্ন দেশের মানুষের জটলা। যদিও ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপাল, কিন্তু আর্থিক সচ্ছলতায় বিদেশিদের থেকে ভারতীয়রা বেশ পিছিয়ে থাকায় বিদেশীদের দাপট এখানে চোখে পড়ার মতো। পাথরের দেয়ালের ঘর প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, তার মধ্যেই রাতের খাবার সেরে সোজা গিয়ে ঢুকলাম লেপের তলায়। ভোর ৬ টায় বেড-টি। তৈরি হয়ে নিচে নেমে এলাম। ধোঁয়া ওঠাথুক্‌পা দিয়ে প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়লাম। আজ গন্তব্য তিলিছো (পর্বতের) বেস।

কিছু পথ চলার পরেই শুরু হল চড়াই। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উঠে চলেছি। ঝুরো পাথরের দেওয়াল ধরে পথ চলা। থামার অবকাশ নেই। গ্রেট বেরিয়ার প্রায় ঘাড় এর উপরে, মাঝে মাঝে কিছু খচ্চর এর দেখা মিলছে। প্রায় বেলা তিনটে নাগাদ হঠাৎ একটা বাঁক ঘুরেই দেখি এক সাইকেল আরোহী, কিছুটা এগিয়ে দূরে দেখা যাচ্ছে তিলিচো বেসে দুটো ট্রেকার্স হাট, এখনো ঘণ্টা দুয়েকের পথ। হঠাৎ আবিস্কার করলাম একজন নয় প্রায় জনা পনেরো সাইকেল আরোহী। আলাপ পরিচয়ের পর জানলাম রাশিয়া থেকে এসেছেন। ওনারা মানাং থেকে তিলিছো বেস অবধি সাইকেল চালিয়ে এসে ফিরে যাবেন পোখরায়।

আমাদের ট্রেকার্স হাট ঠিক করা ছিল আগে থেকেই।একসাথে পনেরো জনের থাকার মতো একটা ঘর। বিকেল পাঁচটায় এসে পৌঁছে কিছুক্ষণ ব্রিশ্রাম নিয়ে ট্রেকার্স হাট এর নীচে এসে দাঁড়ালাম। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। অনেকক্ষণ গল্প হল এক কানাডিয়ান ফ্যামিলির সাথে। তারা এসেছে তিলিছো লেক দেখতে। আমাদের একজন সদস্য অসুস্থ শুনে কিছু ওষুধ দিয়ে সাহায্য করলেন।রাতে সিদ্ধান্ত হল, একটা দিন আমরা ব্রিশ্রাম করব তিলিছো বেস এ।সেইমতো রাত অবধি গল্প চলল। পরের দিন গন্তব্যের দিকে কিছুটা পথ হেঁটে এলাম। বাকি সময় শুয়ে বসে কেটে গেল, রাতে তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়লাম।

আজ আমাদের গন্তব্য তিলিচো লেক। সকাল সাতটায় হাঁটা শুরু হল। আগের দুদিন পথে অনেক লোক ছিল। এখন শুধু আমাদের দল আর একটা দুটো বিদেশী দল। প্রথমেই প্রানান্তকর চড়াই। কয়েক ঘণ্টার পথ চলার পর কিছুটা পথ সমতল এর মত, চুলের কাঁটার মত এঁকেবেঁকে পথ চলেছে। আবার চড়াই শুরু। মাঝে মাঝে পথ কিছুটা বিপজ্জনক। হাওয়ার দাপট বেলা বাড়ার সাথে সাথে বেড়ে চলেছে, এক এক সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে হাওয়ার দাপট আর ধুলোর তাণ্ডবে। বিকেলের দিকে এসে পৌছালাম তিলিচো লেকের ধারে।

হিমালয়ের সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত বৃহত্তম জলাশয় এই তিলিছো লেক ( ৪৯১৯ মিঃ ) উচ্চতায়। ৩.৯ কি.মি দীর্ঘ, ১.৬ কি.মি প্রসস্থ এবং ৮৫ মিটার গভীর। তিলিচো হিমবাহ থেকে তৈরি এই জলাশয়। কোন রকমে গিয়ে ঢুকলাম ট্রেকার্স হাট এ। প্রায় তিরিশ ফুট বাই বারো ফুট ঘরে। তিরিশ জন লোক থাকলাম সেই রাতে। এক কাপ চায়ের দাম ভারতীয় মুদ্রায় ১০০ টাকা। আবারও সেই বিদেশীদের পদলেহন। রাতের খাবার বাসী রুটি, যা বিদেশীদের দেওয়ার পর বেঁচে ছিল। আমরা ভারতীয়রা যাই খেতে চাই না কেন, সে সবই দেওয়া সম্ভব সেই বিদেশীদের মনমতো সব হওয়ার পরে। যাই হোক রাতে কোন রকমে জুতোর উপর মাথা রেখে স্লিপিং ব্যাগে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরের দিন বেরোনো ভোর সাড়ে তিনটায়। তিনটায় বেড-টি। সঙ্গে আগের দিনের বাসি পাউরুটি খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম। হেডল্যাম্প এর আলোয় শুরু হ’ল আমাদের পথ চলা।

আমরা ছাড়া আর কোনও দল নেই। বাকি সবাই আবার ফিরে যাবে তিলিচো বেস হয়ে মানাং এর পথে। কিছুটা এগিয়ে বোল্ডার এর উপর দিয়ে পথ । হঠাৎ চোখ গেল আকাশের দিকে, তিলিছপর্বতের মাথায় এখন সোনার মুকুট। তিলিচো লেক-কে বাঁ দিকে রেখে আস্তে আস্তে উঠতে থাকলাম। আকাশে তুলোর মত মেঘ উড়ে বেড়াচ্ছে। কিছুটা এগিয়ে একটা বিরাট রক টাওয়ার, খুব সাবধানে তার গা ধরে এগিয়ে চললাম। পর পর বোল্ডার টপকে এগিয়ে চলেছি। আমরা তিলিচো লেকের যে প্রান্তে ছিলাম সেখান থেকে ট্রেক করে ঠিক অপর প্রান্তে পৌছাতে হবে। তার পর পার হব মেসোকান্ত-লা। অনেক বেলা হয়ে এসেছে, প্রায় বারোটার সময় আমরা দেখতে পেলাম পাহাড়ের গা বেয়ে আঁচড়ের দাগের মত রাস্তা এঁকে বেঁকে উঠে গিয়েছে। পাহাড়ের উপরে একটা খাঁজেরফাঁকে আকাশে মিশে গেছে সেই পথ।আমরা কয়েক জন এক এক করে এগিয়ে চলেছি। এদিকে আমাদের দলের আরো দুই সদস্য অন্যদিকে মান্ডালা পাস ( ৫৪৬০ মিঃ ) অতিক্রম করে আমাদের সাথে মিলিত হবেন। আসতে আসতে উঠে এলাম ইস্টার্ন পাস ( ৫৩২০ মিঃ ) এর মাথায়।

প্রথমে আমাদের ধারনা ছিল এটাই মেসোকান্ত-লা। খানিক পর বুঝলাম, সে আরও দূরে। হাওয়া প্রচণ্ড বেগে বইছে, সেখান থেকে নেমে আবার পাহাড়ের ঢাল ধরে এগিয়ে চলা। এবার দূরে দেখা যাচ্ছে মেসোকান্ত-লা ( ৫২৪০ মিঃ )। সামনে তাকানো দায়, প্রায় হাত ধরা ধরি করে আমি আর সুমিত উঠে এলাম পাসের মাথায়। কিছু ছবি নেওয়ার পর শুরু হল নামার পালা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে এসেছে, পাসের মাথা থেকে সবাই একে একে নেমে এসেছি। কিছুটা সমতল এর পর আঁকাবাঁকা পথে নিচের দিকে নেমে চলা। বিকেলের দিকে এসে পৌছালাম কাইজাং। দুটো ট্রেকার্স হাট, একটাতে কিছু বিদেশী, আর একটাতে তাদের জিনিষপত্র। রান্নার কোন ব্যবস্থা নেই, অগত্যা অনাহারে রাত্রিবাস! তখনও বাকিরা এসে পৌছায়নি, রাত হয়ে এসেছে, বেশ কিছুক্ষণ পরে দূরে হেডল্যাম্প এর আলো দেখতে পাওয়া গেল।পুরো টিম একসাথে, পাস অতিক্রম করার আনন্দ সবার মনে। খোলা আকাশের নীচে বসে চলল আড্ডা। ওদিকে রাতের খাবার বলতে ওই কেক বিস্কুট, আর খাবার জল। কিছু পোর্টার আমাদের অবস্থা জানতে পেরে ওদের খাবার থেকে আমাদেরকেও খেতে দিল খিচুড়ি। একটা জানালাবিহীন ঘরে কোনরকমে মাথা গোঁজার জায়গা হল। ঘরের মাঝখানে আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা। চারিদিকে খোলা তাই ঠাণ্ডাও বাড়তে লাগলো রাত বাড়ার সাথে সাথে। শুধু ঘড়ির কাঁটা ঘোরার অপেক্ষা। সারা রাত জেগে ভোর পাঁচটায় উঠে বেরিয়ে পড়লাম। সকালের সোনালী আলোয় তিলিছো পিক মায়াময় হয়ে উঠেছে।

আজ আমাদের গন্তব্য জমসম। পথ চলা শুরু হল, পাহাড়ের রুক্ষতা এখানে প্রায় নেই। বড় বড় গাছের ছায়ায় আঁকাবাঁকা পথে চলেছি মনের আনন্দে। দূরে ধৌলাগিরিপর্বত, নীল আকাশের গায়ে দুধসাদা দুর্গ। অনেকটা এসে পৌছালাম ইয়াকখরকায়। কিছুক্ষণের বিরতি, আবার চলতে থাকলাম। পথ এখন নিন্মগামী তাই পরিশ্রম প্রায় নেই বললেই চলে। মানে মাঝে মধ্যেই চোখ চলে যাচ্ছে দূর পাহাড়ের সীমানায়, নীল আকাশের মাঝে শ্বেতকায় পর্বত,আরও যত নাম না জানা পাহাড়েরভাস্কর্য, নিজের অজান্তেই পা থেমে যাচ্ছে। প্রান ভরে শুষে নিচ্ছি সারাবছর শহরে থাকার রসদ। অনেকটা চলার পর দূরে দেখা গেল জনবসতি, পায়ে পায়ে এগিয়ে এলাম। ঘণ্টা দুয়েক হাঁটলে থিনি গ্রাম, তারপর সেই গ্রাম অতিক্রম করে কালিগন্ডকী নদী পার হয়ে আমাদের গন্তব্য জমসম। কিছুক্ষণ পথ চলার পর চলে এসেছি গ্রামের ভেতর, চারিদিকে শুধু সবুজ আপেল গাছ। ব্রীজ পার হয়ে এসে দাঁড়ালাম জমসম বাসস্ট্যান্ডে। জমসম থেকে চুকসাম যাওয়ার সব বাস বেরিয়ে গেছে, কোন প্রাইভেট গাড়ী ও আর যেতে চাইছে না, তাই সেই রাত জমসম এ থাকতে হবে। পরের দিন সকালের বাসে আমরা যাব চুকসাম।

থিনি গ্রাম (২৮৬২ মিঃ) উচ্চতায় অবস্থিত। তিন ভাই এই গ্রাম এর গোড়াপত্তন করেন ১৬০০ শতকে। রাজা থোকারচেন এর তিন সন্তান এই অঞ্চলে রাজত্ব করতেন। রাজা থোকারচেন কে বলা হত ত্রিনেত্র রাজা, কারন তাঁর দু চোখের মাঝে কপালে একটি কালো দাগ ছিল। অন্যান্য গ্রামের গ্রামবাসীরা ও রাজাকে উপঢৌকন দিত, শষ্য বাকায়িক শ্রম দিয়ে।

প্রার রাত আটটায় হোটেলের ঘরে কড়া নেড়ে লোকজনকে জাগিয়ে চুকসাম এর হোটেলে আমরা ঢুকলাম। রাতে কোন রকমে রুটি আর সবজি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরের দিন পারমিট এর কাগজ দেখিয়ে আমরা এগোলাম মুসতাং ভ্যালির দিকে। প্রথমেই কালিগন্ডকী নদী পেরোতে হল, তাঁর পর বিরাট লাল পাহাড়ের রক ওয়াল এর পাশ দিয়ে আমাদের গাড়ীর পথ। আজ আমাদের গন্তব্য লোমান্থাং। ধুলো উড়িয়ে গাড়ী চলেছে নানান রঙের পাহাড়ের ভেতর দিয়ে।কালীগন্ডকীর গভীর নদীখাত কে ডান দিকে রেখে আমরা এগিয়ে চলেছি লোমান্থাং এর দিকে, রুক্ষতা আর পাহাড়ের রঙিন রূপ আমাদের সঙ্গে চলেছে। আমরা প্রবেশ করলাম আপার মুসতাং ভ্যালী তে। ১৮৩০ সালের পর আম-পাল আর পশ্চিম তিব্বত থেকে আসা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা স্বাধীন রাজত্ব গঠন করেন, এবং প্রাচীর ঘেরা রাজধানী তৈরি হয় যার নাম লোমান্থাং। বর্তমান রাজা জিগজী পালবার বিস্তা দাবী করেন নিজেকে একুশ তম বংশধর হিসাবে রাজা আম পাল এর। নাগোরচেন কুঙ্গ সাংপো নামের একজন ধর্মীয় শিক্ষাগুরুকে আহ্বান জানান হয় ধর্ম প্রচারের জন্য। ভারত এবং তিব্বত সীমান্তের নিকটবর্তী অঞ্চলে হওয়ায় প্রায়শই তিব্বতীদের আক্রমন এর সম্মুখীন হতে হতো লোমান্থাং এর লোকেদের। ১৯৫১ সালে মুস্তাং শহরের মর্যাদা পায় এবং তখন থেকেই রাজার ক্ষমতা কমতে থাকে। ১৯৫৯ সালে যখন তিব্বত চিন এর অধীনস্ত হতে বাধ্য হয়, তখন নেপাল সরকার মুস্তাংকে সীমাবদ্ধ এবং নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল হিসাবে ঘোষণা করেন এবং নিন্ম মুস্তাং অঞ্চল পর্যটকদের ভ্রমনযোগ্য করে তোলা হয়। ১৯৯০ সালে নতুন সরকার এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উচ্চ মুস্তাং অঞ্চলে বিদেশীদের ভ্রমণের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। সম্ভবত প্রথম ট্রেকিং টিম ১৯৯২ সালে উচ্চ মুস্তাং অঞ্চলে আসে। সেই একই সময়ে অন্নপূর্ণা কনসারভেসান এর আওতায় আনা হয় উচ্চ মুস্তাং অঞ্চলকে। এখানে বিখ্যাত চারটি বুদ্ধ মন্দির আছে, যার মধ্যে জাম্পা গোম্পা সব থেকে পুরানো। প্রায় পনেরো শতক এর সময়ের তৈরি। অনেক প্রাচীন গুহা আবিস্কার হয় যেখানে নাওয়ারী ভাষার ব্যবহার পাওয়া যায়। অনেক ধর্মীয় ছবি ও সংগৃহীত হয়। নাওয়ারী ভাষা উৎপত্তি হয় ইন্দো-আর্য এবং তিবেতো-বার্মান ভাষা থেকে। চোসার এবং চোনুপ গ্রাম এই অঞ্চলে বিখ্যাত তাদের প্রাচীনতার কারনে, বেশীর ভাগ গুহা এই অঞ্চলে পাওয়া যায়। খুব কম সংখ্যক গুহাই প্রবেশ যোগ্য। চোসার গ্রামে ১৯৯১ সালের পরিসংখ্যান ২৬০ টি ঘর নিয়ে ৬০০ থেকে ৬৫০ মানুষের বাস, যাদের জীবিকা পশুপালন এবং চাষবাস।

চনুপ গ্রামটি একটু বর্ধিষ্ণু যেখানে ১৮০ টি বাড়িতে ১৩০০ মত মানুষ বসবাস করেন। বিকেলের দিকে গিয়ে পোঁছলাম লোমান্থাং। এখানকার সব মানুষদের সঙ্গেতিব্বতীদের জীবনযাত্রার মিল আছে। কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়ার থেকে বাঁচতে তাড়াতাড়ি হোটেলে প্রবেশ করলাম। পরের দিন আমরা এলাম সেই বিখ্যাত প্রাচীর ঘেরা রাজার দুর্গ। দুর্গের ভেতরে সব ব্যবস্থা আছে। প্রবেশদ্বারে এখানকার তিন ধর্মগুরুর মূর্তি। বাঁ দিকে একটা রাস্তা চলে গেছে, এগোতে থাকলাম সেই দিকে। থাকার বাড়ী, দোকান, বাজার সবই আছে। বিজ্ঞান সম্মত ভাবে জলনিকাশী ব্যবস্থা রয়েছে চারিদিকে। আশি থেকে একশ ফুট উঁচু প্রাচীরের ভেতরে একটা ছোটখাটো শহর, রয়েছে আস্তাবল, গোয়াল। প্রার্থনাগৃহ আছে উপাসনার জন্য। কাঠের ব্যবহার এখানে সর্বাধিক। জঙ্গলের ঝোপ থেকে কেটে এনে ছাদে শুকিয়ে রাখা হয়। প্রত্যেকটা বাড়ির সামনে অপ্রসস্থ রাস্তা, ঘুরতে ঘুরতে দুর্গের একদম পেছনের দিকে চলে এসেছি আমরা। আগে পেছনের দিক দিয়ে বেরোনোর একটা রাস্তা ছিল, বর্তমানে তা বন্ধ। দুর্গের ঠিক মাঝখানে আছে এখানকার বিখ্যাত গুম্পা গুলি থুকপাচেন, চেওদে ও জাম্পা গুম্পা। উত্তর পশ্চিম দিকে ও উত্তর দিকে সমাধিস্তুপ। উত্তর দিক দিয়েই দুর্গের মূল প্রবেশ পথ। ওই দুর্গের বিপরীত দিকে এগোলে উত্তর পূর্ব দিকে চলে গেছে চোসার গ্রাম যাওয়ার পথ আর উত্তর পশ্চিম দিকে গেছে চোনেপ গ্রাম যাওয়া পথ। প্রায় সারাটা দিন ইতিহাসের সঙ্গতে কেটে গেল। বিকেলে ঘরে ঢুকে শুধু ভেবে চলেছি কত পুরনো অথচ প্রানবন্ত একটা সমাজ ব্যবস্থা বহমান নদীর মত ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে এগিয়ে চলেছে।

থাক খোলা অঞ্চলে আর একটি জনবসতি যারা থাকালী বলে পরিচিত। থাকুচেন পাহাড় এর দক্ষিণপ্রান্তে কালিগন্ডকী, থাকালীদের ব্যবসা ক্ষেত্র। নুন ব্যবসা এদের মূল জীবিকা। ২০০১ সালের গননা অনুযায়ী নেপালী জনবসতীর মাত্র ০.০৬ শতাংশ থাকালী। থাকালীদের বলা হয় নেপালের সবথেকে সফল ব্যবসায়ী। মূলত তিব্বতী বৌদ্ধধর্ম মেনে চলে তারা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় থাকালীদের জুড়ি মেলা ভার। শিনো তিব্বতি ভাষা বা চিন এবং তিব্বতি ভাষার সংমিশ্রনে এক ভাষা যা তাদের মূল ভাষা অর্থাৎ থাকালী ভাষা হিসাবে প্রচলিত। লাথোওয়া, টোরনালা এবং থালো থাকালীদের মূল উৎসব। থাকালী পুরোহিতরা ধনোস নামে পরিচিত। মুসতাং উপত্যকার পরতে পরতে ইতিহাসের আর ঐত্যিহ্যের আনাগোনা, মাত্র এক দু দিন যথেষ্ট নয় এ বিপুল ঐতিহাসিক সম্ভার জানার জন্য।

সকালে টোস্ট আর চা খেয়ে একটু প্রাতভ্রমন, রোদের তাপ নেই বললেই চলে। সকাল দশটায় প্রাতরাশ সেরে এগোলাম আমরা চোসার গ্রামের উদ্দেশ্যে। জল এই সমগ্র অঞ্চলে এত কম হওয়ায় চারিদিকে শুধুই রুক্ষতা। গ্রামে প্রবেশের সময় লোকজন দেখতে পেলাম, যাদের সাথে কোনোভাবেই কথার আদানপ্রদান করা গেল না। দূর থেকেই দেখতে পাচ্ছি পাহাড়ের গায়ে বিভিন্ন গুহা। ভাবতেই অবাক লাগছে দুই থেকে তিন হাজার বছর এর পুরনো মানুষের তৈরি গুহা। দশ হাজার এর কাছাকাছি গুহা আছে এই অঞ্চলে, কিছু গুহায় পর্যটকরা যেতে পারে, কিন্তু বেশিরভাগই মানুষের অগম্য। প্রত্নতত্ত্ববিদদের বক্তব্য অনুযায়ী একসময় বেশকিছু সংরক্ষিত মৃতদেহ, নরকঙ্কাল ও অনেক পুরনো ব্যবহৃত পাত্র ও প্রচুর বৌদ্ধ লিপি ইত্যাদি পাওয়া যায়। মূলত কালিগন্ডকীর গভীর গিরিখাতে পর্বতগাত্রে প্রায় হাজার ফুটেরও উপরে ওইসব গুহা অবস্থিত। সমস্ত গবেষণা এক জায়গায় এসেই থেমে যায়, কেন এই গুহার সৃষ্টি?কারা তৈরি করেছেনএই সব গুহা? ২০১০ সালে একদল পর্বত আরোহী সাতাশটির মত সংরক্ষিত মৃতদেহ আবিস্কার করেন, যেগুলো তৃতীয় থেকে অষ্টম শতকের, যখন বৌদ্ধধর্ম এই অঞ্চলে বিস্তার লাভ করে নি। গুহার প্রবেশ সঙ্কীর্ণ, প্রায় হাঁটুর উপর ভর করে ঢুকতে হয়। ভেতরে পাঁচ থেকে ছয় ফিট উচ্চতায় ছাদ। ছোট ছোট ঘর তৈরি করা হয়েছে গুহার ভিতরে, আলো বাতাস আসার জন্য পাথরের দেয়ালে গর্ত তৈরি হয়েছে। বেশ কিছু ঘর দেখে মনে হ’ল হয়ত শস্য মজুত রাখার নানা ব্যবস্থা করা হয়েছে পাথর কেটে। কিছু ঘরে দেয়ালে আঁচড় কেটে অনেক কিছু লেখা যা পড়া সম্ভব হয় নি আমাদের মতো সাধারন মানুষের পক্ষে। সারাদিন চোসার গ্রামে ঘুরে কেটে গেল। মাটির দেওয়ালে সাদা রঙ করা সব বাড়ী, জনবসতি নেই বললেই চলে। বেশ কিছু গুহা দেখতে পেলাম যার বাইরে লাল রঙ করে প্রবেশ পথ চিহ্নিত করা আছে।

 

এসব রঙ ওই অঞ্চলের মাটি পাথর থেকে তৈরি। যখন ফিরছি মনে হল যেন তিন হাজার বছর এর সমাজ ব্যবস্থার সবকিছু এখনও জীবন্ত। বেশ কিছু তথ্য গাইডের কাছ থেকে জোগাড় করলেও যেন মন ভরল না। প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করেন তিন ভাগে এই সব গুহা ব্যবহার হত। আজ থেকে তিন হাজার বছর আগে মৃতদেহ সংরক্ষণ এর জন্য, তার পর প্রায় হাজার বছর পরে অর্থাৎ আজ থেকে দু হাজার বছর আগে বসবাস এর জন্য ব্যবহার হত এবং আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে ব্যবহার হত বৌদ্ধ ধর্মচর্চার ক্ষেত্র হিসেবে। ফিরে এলাম হোটেলে, হোটেলে কিছু ম্যাপ আর কিছু বই রাখা আছে, সেগুলো উল্টে পাল্টে পড়তে চেষ্টা করলাম।

আজ আমাদের গন্তব্য ইয়ারা গ্রাম। সময় অল্প লাগবে, অবস্থান মুস্তাং ভ্যালির পূর্ব দিকে, রাস্তা আগের থেকে আরো খারাপ, কিন্তু পথের শোভা সব কষ্ট দূর করে দিচ্ছে। মাথার উপর নীল আকাশ, আর রঙবেরঙের পাহাড়। কখনও লাল, কখনও হলুদ, আবার কোনও পাহাড় ছাইরঙা। বেলা বারোটায় গিয়ে পৌছালাম লুড়ি গুম্ফার দিকে। ঘণ্টা দুয়েকের হাঁটা পথ কালিগন্ডকী নদীখাত ধরে। প্রায় বেলা দুটোর পর এসে পৌছালাম সেই বিখ্যাত হাজার বছরেরও বেশী পুরানো লুড়ি গুম্ফা, মাটি থেকে অন্তত আড়াইশো ফুট উচ্চতায় অবস্থিত, পৌঁছে পায়ে পায়ে হেঁটে উঠে এলাম গুম্ফার সদর দরজায়। ওঠার সময় আশে পাশে আরো কিছু গুহা চোখে পড়ল, দেখে মনে হল সে গুলোর ভেতরেও অনেকটা গভীর, কিন্তু ওই অবধি যাওয়া সম্ভব নয়, এতটাই বিপদজনক জায়গায়। মুস্তাং ভ্যালির বিখ্যাত গুহাগুলির মধ্যে লুড়ি অন্যতম। প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকে ভেতরে একতলা দোতলা করা আছে, সাধারন এর ওঠার জন্য সিঁড়ি করা আছে, কিন্তু যারা বানিয়েছিলেন তাদের হয়ত প্রয়োজন হত না। একদম ভিতরে ঘরে আছে হাতে আঁকা জনৈক মহাসিদ্ধের ছবি। উনি নাকি এখানেই সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। একটা দশফুট বাই দশফুট গম্বুজাকৃতি ঘর এর ভিতরে আছে ওনার সমাধি। ছাদের দেয়ালে আঁকা বিভিন্ন ছবি যার রঙ এখনও অমলিন। পাশে আর একটা ছোট ঘরে পাথর কেটে জানালা বানানো। মেঝে থেকে সামান্য উঁচুতে বেদী করা আছে। এর পর আরো দুটো ছোট কুঠুরি, ঘর থেকে বেরোনোর পথে কোনাকুনি ছাদের উপরে। একজন শুধু বসতে পারে সেখানে মাথা নিচু করে। প্রায় বিকেল হয়ে আসছে, আমরাও নামতে থাকলাম। আবার অনেকটা পথ যেতে হবে, তারপর গ্রাম। হাঁটা শুরু করলাম গন্ডকী নদীখাত ধরে, জল প্রায় নেই বললেই চলে। এই নদীকে নারায়নী নদীও বলা হয়। এই নদীতেই পাওয়া যায় শালগ্রাম শিলা যা নারায়ন শিলা নামেও পরিচিত। একমাত্র এই গণ্ডকী নদীতেই পাওয়া যায় এই শিলা,হিন্দু ধর্মেযার মাহাত্ম্যঅসীম। আসলে এগুলি হ’ল এক ধরনের জলজ প্রানীর জীবাশ্ম বা ফসিল। পাথরের গায়ে যে চক্র আকার তার জন্য এই পাথরের ধর্মীয় মূল্য এত বেশী।হেড ল্যাম্প এর আলোয় হেঁটে চলেছি। নদীখাত কোথায় খুবই সংকীর্ণ, প্রায় সন্ধের দিকে গ্রামে এসে পৌছালাম। রাতে মুরগির মাংস আর রুটি খেয়ে শুয়ে পড়লাম।

আজ আমাদের গন্তব্য সারেঙ্গ। সকালে প্রাতরাশ করে হাঁটা শুরু করলাম। প্রায় এক ঘণ্টার কাছাকাছি হাঁটার পর দেখতে পাই তাসি কাবুম যার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে পুইওন খোলা। প্রায় সাত থেকে নয়টি গুহা রয়েছে এখানে যার প্রত্যেকটির ভেতরেই আছে চোরতেন। এগিয়ে চললাম আমরা। আবার এসে নামলাম কালিগন্ডকীর খাতে। বেলা দুটোর সময় এসে পৌছালাম সারেঙ্গ গ্রামে। জনবসতি নেই। নদীপথে আসতে আসতে অনেক শালগ্রাম শিলা দেখতে পেলাম, কিছু সংগ্রহ করলাম স্মৃতি রক্ষার জন্য। কিছুক্ষণ পরে গাড়িতে উঠে সোজা চললাম জমসম এর দিকে, সঙ্গে নিয়ে বিশাল ইতিহাসের স্মৃতি। এবার ঘরে ফেরার পালা।

শেয়ার করুন সবাইকে
error: Content is protected !!