
অমূল্য সেন – এর মুখোমুখি
অমূল্য সেন বাংলা তথা ভারতের পর্বতারোহণের মানচিত্রে একটি বিশেষ নাম। ষাটের দশকের শুরু থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ে বহু অভিযানে তিনি ছিলেন; কখনো নায়ক, কখনো নেতা। বহু সম্মান পেয়েছেন। ভারত সরকার তাঁকে আজীবন অভিযাত্রীর স্বীকৃতি হিসেবে “তেনজিং নোরগে” পুরস্কার দিয়েছে।
এমন একজন মানুষের সাক্ষাত্কার নেওয়া হয়েছিল এভারেস্ট বিজয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হয়েছে এমন এক সময়ে। হিমালয়ান স্নোলাইনার্স – এর পক্ষ থেকে এই সাক্ষাত্কার নিয়েছিলেন অরুণ ঘোষ ও অশোক ঘোষ।
◼ = স্নোলাইনার্স’র তরফে প্রশ্ন
➡ = অমূল্য সেন’র উত্তর
————————————————————————
◼ অমূল্য দা, আপনার মতো একজন মানুষ আমাদের সংস্থার বিশেষ পৃষ্ঠপোষক এবং আপনার সাথে বড়ো সুন্দর ব্যক্তিগত সম্পর্ক। এটা আমাদের কাছে খুব গর্বের বিষয় এবং প্রেরণার কারণ।
➡ না না, ও কিছু নয়। আমি তোমাদের খুব ভালোবাসি, আর তোমরা আমাকে একটু বেশিই ভালবাসো। তাই এমন মনে হয়। বলো, তোমাদের প্রশ্ন কী?
◼ অমূল্য দা আপনি একদিন যুবক ছিলেন —
➡ আমি এখনো যুবক।
◼ না, আমরা বলতে চাইছি– বয়সের হিসেবে যখন যুবক ছিলেন —
➡ হ্যাঁ, তা ছিলাম।
◼ সেই যুবক অমূল্য সেন কীভাবে মাউন্টেনিয়ার অমূল্য সেন হয়ে উঠলেন?
➡ সে তো অনেক বড়ো গল্প ।
⏺ছোটো করে বলুন।
➡ আমার দেশ ছিল বরিশাল। যেখানে ছেলেবেলা কেটেছে বলতে পার সেটা জীবনানন্দের রূপসী বাংলা। আমার বাবা ছিলেন শিক্ষক এবং লেখক। তিনি খুব আদর্শবান ছিলেন, আবার খুব শান্ত প্রকৃতির। আমি একেবারেই–
◼ তাঁর নাম ?
➡ অতুলচন্দ্র সেন। যেটা বলছিলাম – আমি কিন্তু একেবারেই শান্ত ছিলাম না। গাছে চড়তাম খুব। সুপুরি, নারকেল – আবার ডিঙা বাইতাম খালে বিলে। ফুটবল খেলেছি চুটিয়ে, মানে দাদাও খেলত কিনা- সে দারুণ সময় ছিল। তারপর রাজনৈতিক কারণে দেশভাগ হল। আমরা চলে এলাম কলকাতায়। কলকাতায় এসে দেখলাম এখানে আকাশটা খুব ছোটো, কিন্তু সুযোগ অনেক বেশি। কলেজে ভর্তি হলাম, চারুচন্দ্র কলেজে। এনসিসি শুরু করলাম, রোয়িং শুরু করলাম। রোয়িং-এ আমি টিমের ক্যাপ্টেন ছিলাম। ইউনিভার্সিটি রিপ্রেজেন্ট করেছি। আবার একই সাথে স্টুডেন্টস ইউনিয়নও করেছি।
◼কোন ইউনিয়ন ?
➡ না, কোনো রেকগনাইজড দলের নয়। ওটা ছিল একেবারে নন-পলিটিক্যাল। আমি সেই ইউনিয়নের সম্পাদক ছিলাম দীর্ঘদিন।
◼ মানে ওই দল কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের–
➡ হ্যাঁ, নির্বাচিত ইউনিয়ন ছিল।
⏺ সেই সব থেকে পাহাড়ে কীভাবে —
➡ বলছি৷একবার ব্যারাকপুরে এনসিসি ক্যাম্প করছি। সেখানে আমাকে বলা হল আমি সিলেক্ট হয়েছি রিপাবলিক ডে প্যারেডে জয়েন করার জন্য। ঠিক সেই সময় হঠাৎ একটা খবর পেলাম – দার্জিলিঙে বেসিক কোর্স হচ্ছে মাউন্টেন ক্লাইম্বিং এর। কারা কারা যেতে চায়? আমি বললাম, ‘আমি যাব’। আমাদের ইনস্ট্রাক্টর ক্যাপ্টেন মজুমদার বললেন, ‘তুমি যাবে কি? তুমি তো রিপাব্লিক ডে প্যারেডের জন্য সিলেক্টেড। আমি বললাম, ‘দূর রিপাবলিক ডে প্যারেড! আই লাইক টু গো টু মাউন্টেন।’ব্যাস, ওখান থেকে মিলিটারি গাড়িতে বসে চলে গেলাম ফোর্ট উইলিয়াম। খুব স্মার্ট চেহারার একজন অফিসার আমাদের ইন্টারভিউ নিলেন। উনি ছিলেন মেজর জয়াল।
⏺ ইনিই কি গ্রেট নন্দু জয়াল?
➡ ইয়েস।উনি আমাকে প্রথমে জিজ্ঞেস করলেন, হোয়াট ইজ ইওর এ-ম ইন লাইফ ? ‘বললাম, ‘স্যার, আই লাইক টু গেট এ কমিশন্ড সার্ভিস ইন দি ইন্ডিয়ান আর্মি।’ উনি বললেন, ‘তুমি কি মনে করো আর্মির জীবন সহজ?’আমি বললাম, ‘নো স্যার, স্টিল আই ওয়ান্ট ইট, অ্যান্ড আই লাভ ইট।’
‘কখনও মাউন্টেন দেখেছো?’
‘নো স্যার।’
‘কোনও ক্লাইম্বিং এক্সপিরিয়েন্স আছে?’
‘নো স্যার’ -বলেই আবার বললাম, ‘ইয়েস স্যার। ‘উনি বললেন, ‘কী নো স্যার, ইয়েস স্যার বলছো?’ মাউন্টেন দেখনি, ‘তাহলে কী ক্লাইম্ব করেছো? ‘
আমি বললাম, ‘স্যার, আই ক্যান ক্লাইম্ব কোকোনাট ট্রিজ, ওয়ান আফটার অ্যানাদার।’
এরপর নানারকম টেস্ট হলো। আই স্টুড ফার্স্ট । ১৫০ জনের মধ্যে ৬ জন সিলেক্ট হল। তারপর তো কোর্সে জয়েন করলাম। তখন ৪২ দিনের কোর্স ছিল। তেনজিং ছিলেন। প্রথমে বেসিক, তারপর অ্যাডভান্স। তারপর মেথড অফ ইনস্ট্রাকশন্, ইনস্ট্রাকটরদের কোর্স, এবার তেনজিং-এর সাথে। আমি স্টুডেন্ট, তেনজিং ওয়াজ অলসো আ স্টুডেন্ট। ভারতে এই কোর্স সেই প্রথম। তেনজিং ছিলেন রোপ লিডার, আমি কোয়ার্টার মাস্টার। তখন থেকে ওঁর সঙ্গে আমার খুব ঘনিষ্ঠতা হয়। সেটা শেষ পর্যন্ত ছিল। কলকাতায় এলে আগে থেকে আমাকে খবর দিতেন। অমূল্য যেন ফ্রি থাকে।
◼ মাউন্টেনিয়ারিং লাইফ শুরু হল কখন?
➡ সিক্সটি টু-তে। হিমালয়াজ এ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক চঞ্চল মিত্র আমার কাছে এলেন।বললেন, ‘আমাদের নীলগিরি এক্সপিডিশন হচ্ছে। আপনি চলুন।’ আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, ‘না।’ ‘সে কী? কেন?’আমি বললাম, ‘আমি ভারতের সর্বোচ্চ পর্বত নন্দাদেবী এক্সপিডিশনের পরিকল্পনা করছি। এখন আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’
উনি বললেন, ‘সে পরিকল্পনা করুন। কিন্তু এই এক্সপিডিশনে আপনাকে আমাদের দরকার। আপনি আমাদের ডেপুটি লিডার হবেন।’
আমি ভেবে বললাম, ‘যেতে পারি, কিন্তু নো লিডার,নো ডেপুটি লিডার -আমি পিক ক্লাইম্ব করতে চাই।’
উনি বললেন, ‘তাতে সমস্যা হবে না। লিডার অত্যন্ত ভালো–‘
‘কে লিডার ? ‘
‘সি কে সুরানা।’
‘ও, সুরানা! সে আমার বিশেষ বন্ধু, আমি রাজি।’ কিন্তু হল কী, শেষ পর্যন্ত সুরানা যেতে পারল না। পারিবারিক সমস্যা। আমি হয়ে গেলাম লিডার। চলে গেলাম। ছেঁড়া জুতো, সামান্য পোশাক, ঠিকমতো কোনো কিছুই নেই —
◼ মানে আপনি শুরু করলেন লিডারশিপ দিয়ে ?
➡ হ্যাঁ, আমার অভিযান শুরু নেতৃত্ব দিয়ে।
◼ নীলগিরিতে আগে অভিযান হয়েছিল?
➡ দু-বার। তাতে মেজর জ্ঞান সিং ছিলেন। নওয়াং গোম্বু ছিলেন। কিন্তু সফল হয়নি। তা আমি গোম্বুর সাথে কথা বললাম। কী কী অসুবিধা হয়েছিল শুনলাম।
◼ কোনো গ্রান্ট পেয়েছিলেন ?
➡এটা আমাদের স্পনসর করেছিল, স্টেটসম্যান পত্রিকা। আর বাকি টাকাটার ব্যাবস্থা করে দিয়েছিলেন প্রফুল্ল সেন।
⏺ চিফ মিনিস্টার ?
➡ হ্যাঁ, চিফ মিনিস্টার প্রফুল্ল সেন। যাইহোক সেকেন্ড অক্টোবর আমরা ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স-এ বেস ক্যাম্প করি। এই এক্সপিডিশনের একটা বড়ো বৈশিষ্ট্য ছিল- মানে আমার তাগিদে হয়েছিলো, আমি চেয়েছিলাম ইট মাস্ট বি এ প্রপার ব্লেন্ডিং অফ স্পোর্টস অ্যান্ড সায়েন্স।
⏺ কী রকম?
➡ আসলে তখনো পর্যন্ত ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্সে কোনো ইন্ডিয়ান এক্সপ্লোরেশন হয়নি।অনেক লেখালিখি হল। বোটানিক্যাল সার্ভে থেকে নামকরা বোটানিস্ট ডঃ ইউ সি ভট্টাচার্যকে দলে পাঠানো হল। উনি সেই বারে ৪৩০টি স্পেসিম্যান সংগ্রহ করেছিলেন।
এদিকে ভারত চীন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। বেস ক্যাম্প থেকে খবর পাচ্ছি। আমাদের প্রগ্রেস অবশ্য থামেনি। ২২শে অক্টোবর আমরা সামিট ক্যাম্পে পৌঁছে গেলাম। খুব খারাপ অবস্থা; জামা নেই, জুতো নেই। ইকুইপমেন্ট সামান্য। তা আমি তো লিডার, আমি ঠিক করলাম দুজন অ্যাটেম্পট করবে, দুইয়ের বেশি নয়। সেই দুজন হল ভানু ব্যানার্জী এবং টাইগার তোপকে। ওরা সামিট করল।
◼ দুজনেই ?
➡হ্যাঁ, দু’জনেই। সেটাই ছিল নীলগিরিতে প্রথম সফল ভারতীয় অভিযান। এরপর আজও পর্যন্ত কেউ সাকসেসফুল হয়েছে বলে শুনিনি।
◼তাহলে আপনার শুরুটা দারুণ হয়েছিল?
➡ তা বলতে পার।তবে দুর্ঘটনাও ঘটেছিল সেবার।ভানু ব্যানার্জির ফ্রস্ট বাইট হয়েছিল। এই ভানু হিলারির সাথে এক্সপিডিশন করেছে।আর তোপকে- যে তোপকে সাতবার এভারেস্টে সাউথ কল পর্যন্ত মাল ফেরি করেছে, তার ছটা আঙুল বাদ গেল। স্টেটসম্যান তার সমস্ত চিকিৎসার ভার নিয়েছিল এবং পরে ওদের উদ্যোগে তোপকে উত্তরকাশীতে ইনস্ট্রাক্টরের পদে চাকরি পায়।
◼ আপনার এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সাকসেসগুলো সম্পর্কে বলুন।
➡ আমি যত এক্সপিডিশনে গেছি সবই তো সাকসেস। আমার সাকসেসের হিসেবটা অন্য রকম। সামিট করতে পারলেই সাকসেস, না পারলে নয় – এটা আমি বিশ্বাস করি না।
◼ সেটা আমরা মানছি। আপনার মতো করেই বলুন।
➡ নীলগিরি আর এভারেস্ট বাদরেখে বলা যায় সুদর্শন,সতোপহ্ন, যোগিন, চন্দ্র, সিনোয়েলচু। সতোপহ্ন আমরাসামিট করতে পারি নি। কিন্তু সেবারে একটা নতুন পর্বতকে আমরাসবার নজরে নিয়ে আসি। চতুরঙ্গী রেঞ্জের একটা নতুন পিক আমরাএগারো জন মিলে ক্লাইম্ব করি। ওটার নাম দিই রাধানাথ পর্বত।
◼ রাধানাথ সিকদারের নামে?
➡ হ্যাঁ, সার্ভে অফ ইন্ডিয়া অবশ্য নামটা রেকগনাইজ করেনি। আইএমএফ রেকগনাইজ করে।
◼আচ্ছা অমূল্য দা, এইচএমআই তো ভারতের প্রথম মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট ।
➡ হ্যাঁ, সম্পূর্ণ বিধান রায়ের দান। নেহরু চান নি, ডাঃ রায়ের জেদেই হয়।
◼ তেনজিং ছিলেন প্রথম ফিল্ড ডিরেক্টর।
➡সেখানেও বিধান রায়ের হাত। গল্পটা তেনজিং এর কাছ থেকে শোনা। রাজকাপুর তেনজিং কে প্রায় নিয়ে যাচ্ছিল বম্বেতে, সিনেমায় নামাবে। খবর পেয়ে বিধান রায় বললেন, ‘সে কী! তোমাকে ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি, তোমার কাজ সেখানে।’
◼ এইচএমআই-এর দৌলতে ভারতে প্রথম যারা মাউন্টেনিয়ার হয়ে এল তাদের বেশির ভাগ বাংলার, কলকাতার।
➡ বলতে পার।
◼ এখন সারা ভারতে মাউন্টেনিয়ারদের মধ্যে বাঙালির সংখ্যা কেমন?
➡ট্রেনড মাউন্টেনিয়ার বাংলার সবচেয়ে বেশি।
◼ এক্সপিডিশনের সংখ্যা?
➡ শতকরা ৭৫ ভাগ এক্সপিডিশন বাংলা থেকেই হয়।শুধু এক্সপিডিশন নয়, মাউন্টেনিয়ারিং এলায়েড কাজ, যেমন রক ক্লাইম্বিং, সেমিনার, লেকচারস,একজিবিশন,কম্পিটিশন ইত্যাদি বাংলায় যা হয় বিশ্বের কোথাও হয় না।
◼ এখানেই আমার প্রশ্ন – এত রিসোর্স আছে,এত কাজ হচ্ছে, তবু বাংলা থেকে এখনো পর্যন্ত তেমন বড়ো মাপের এক্সপিডিশন হল না – কেন?
➡এটা মানতে পারলাম না। বড়ো এক্সপিডিশন যথেষ্ট হয়েছে। মানা হয়েছে,কামেট হয়েছে, ত্রিশূলী, আবিগামিন হয়েছে, আরও কত কী। বড়ো এক্সপিডিশন হয়নি কে বলল?
◼ এগুলো কোনোটাই এইট থাউজেন্ডার নয়।
➡তা নয়, কিন্তু টেকনিকালি অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। তাছাড়া সবাই তো বড়ো এক্সপিডিশন বলতে এভারেস্ট বোঝে —
◼ আমরা তা বলছি না।
➡ দেখ এই স্টেট থেকে এভারেস্ট এক্সপিডিশন হয়েছে তিনতিনবার।
⏺ কিন্তু সামিট হয়নি।
➡দেখ সামিট হয়নও কারণ–
◼ অমূল্য দা আমরা এভারেস্ট কে বাদ রেখে কথা বলি।
➡ না না,এভারেস্ট কে বাদ দিয়ে —
◼ অমূল্য দা, এভারেস্ট নিয়ে আমরা পরে কথা বলছি। আপাতত আমরা ওই মেজর এক্সপিডিশনের প্রশ্নটা থেকে আবার শুরু করি।
➡বেশ বল।
◼ আমাদের বক্তব্য, এভারেস্ট ছাড়াও অনেক বড়ো মাউন্টেন তো রয়েছে —
➡ আমাদের কাঞ্চনজঙ্ঘা আছে, নন্দাদেবী আছে।
◼ বোধহয় সেগুলি টেকনিকালি মোর চ্যালেঞ্জিং?
➡কোনো সন্দেহ নেই।
◼ সেখানে এক্সপিডিশন করা গেল না কেন?
➡ মূলতমোটিভেশনের অভাব। বড়ো এক্সপিডিশন বলতে সবাই এভারেস্ট বোঝে। তার গ্ল্যামার বেশি। তাছাড়া টাকার অভাব। টাকা ছিল না, টাকা নেই।
◼ কিন্তু এভারেস্ট এক্সপিডিশন হয়েছে —
➡ এভারেস্টের গ্ল্যামার বিশাল, সেই গ্ল্যামার ভাঙিয়ে টাকা জোগাড় করা গিয়েছিল, কিন্তু যথেষ্ট নয়।
◼ আপনি কি সত্যি মনে করেন বড়ো কাজের জন্য টাকার অভাব হয়?
➡এটা অনেকে বলে, ভালো কাজের জন্য টাকার অভাব হয় না। আমিও বিশ্বাস করি। কিন্তু টাকাটা উঠবে কী করে?তেমন ইনফ্রাস্ট্রাকচার গড়ে ওঠে নি।
◼ আপনি চেষ্টা করেছিলেন?
➡ করিনি যে তা নয়, কিন্তু আমি ভালো সংগঠক নই। যেমন ধর – গোম্বু আমাকে বলেছিল, সিরিয়াসলি বলেছিল,কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপিডিশন হবে। বলেছিল, ‘তুমি টাকার ব্যবস্থা কর, আমি বাকি দিকগুলো দেখছি।’আমি পারলাম না। আনন্দবাজার পারত, ওদের টাকার অভাব নেই। কিন্তু ওরাও এগিয়ে আসেনি।
◼ ওটা কোন সময়ের কথা?
➡তখন আমি ইউথ ওয়েলফেয়ারের ডেপুটি ডিরেক্টর।সুভাষ চক্রবর্তী কে বললাম। উনি বললেন, ‘আমরা সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আপনি এভারেস্টের কথা ভাবুন।’
◼ সুভাষ চক্রবর্তী কি আপনার উদ্যোগকে যথেষ্ট সমর্থন দিতেন না?
➡ যথেষ্ট বেশিই দিতেন। উনি যেভাবে দৌড়ঝাঁপ করেছেন, এনকারেজ করেছেন, তার তুলনা হয় না। প্রফুল্ল সেনও করতেন। বাট সুভাষ চক্রবর্তী ইজ ডিফারেন্ট। এই দুজনের কাছে আমার ঋণের শেষ নেই।
◼ তাহলে হল না কেন?
➡হল না কোথায়?কিছু তো হল।
◼ না, সেরকম কিছু তো হল না।
➡ সেরকম ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরি করা যায় নি, আগেই বলেছি। সেজন্য ছুটোছুটি বেশি হয়েছে, কাজ কম হয়েছে। মোদ্দা কথা হল, এমন এক সংগঠন গড়ে তোলা যায়নি, যে সংগঠন বড়ো এক্সপিডিশনের ঝক্কি নিতে পারে, ধারাবাহিকভাবে।
◼ আপনি নিজে চেষ্টা করলেননা কেন?
➡ সেটা আমার অক্ষমতা, আগেই বলেছি। আমার সোর্স ছিল অনেক, কাজে লাগাতে পারিনি।
◼ কিন্তু আপনি তো অজস্র অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
➡ হ্যাঁ বছরে তিনটে অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছি। নেতৃত্ব দিয়েছি, কিন্তু আমি অর্গানাইজ করিনি। বিভিন্ন ক্লাব অর্গানাইজ করেছে, আমাকে ডেকেছে, আমি চলে গেছি।
◼ তাহলে কি এটা ধরে নেব, আপনি সংগঠন করার জন্য তেমন সময়ই পাননি?
➡ বলতে পার। আসলে এখানে আমার মনে হয়,একদিকে ক্ষতি হলেও অন্যদিকে একটা বড়ো লক্ষ্য তো পূরণ হয়েছে। হিমালয়ের প্রতি মানুষের টান বেড়েছে, অভিযাত্রীদের যাওয়া আসা বেড়েছে। আমরা তো চেয়েছিলাম এই যে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের বিশাল ক্ষেত্র -এখানে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছেলে-মেয়েরা ছুটে আসবে – সেই লক্ষ্য খানিকটা হলেওতো পূরণ হয়েছে।
◼ এখন যেসব ক্লাবগুলো মোটামুটি নিয়মিত ভাবে এক্সপিডিশন করছে- তাদের কাজ সম্পর্কে আপনার ধারণা কী?
➡অনেকেই হয়তো ভালো কিছু করছে। কিন্তু, আমার মনে হয় এরা যথেষ্ট অর্গানাইজড হয়ে যাচ্ছে না, শৃঙ্খলারও অভাব আছে। দুমদাম করে বেড়িয়ে পড়ছে।
◼ এরকম কেন হচ্ছে?
➡ মানসিকতা গড়ে ওঠেনি ঠিক মতো। বড় পিক ক্লাইম্ব করে হনু হতে চায়। অনেকের কাছে চুড়োটাই আসল, নীতি-আদর্শের বালাই নেই। আর এসবের ফলে কী হচ্ছে? দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে। যারা মারা গেছে – ৯০% হচ্ছে সাবজেক্টিভ হ্যাজার্ডস, নিজেদের ভুলে। অহেতুক বেপরোয়া হবার কারণে। ওই যে, চুড়োয়উঠতে হবে, যে কোনওভাবে।
◼ আপনার নেতৃত্বে যত অভিযান হয়েছে তার মধ্যে এরকম কোনো–
➡একটিও না। তোমাদের সকলের শুভেচ্ছায়,আজ পর্যন্ত যত অভিযানে আমি নেতৃত্ব দিয়েছি তাতে এরকম কিছু ঘটেনি।
◼ কোনো ক্যাসুয়ালটি হয়নি?
➡ ক্যাসুয়ালটি হয়েছে, কিন্তু কোনো ফ্যাটাল ক্যাসুয়ালটি হয়নি। ক্যাসুয়ালটি হয়েছে; এভারেস্টে গৌতমের ফ্রস্ট বাইট হল, সেও তো নিজের দোষে।
◼ কী রকম?
➡ ২৭০০০ ফুটের ওপর অলটিচুডে ব্লিজার্ডের মধ্যে গ্লাভস্ খুলে সে ছবি তুলতে গেল।
◼ আপনি কি অ্যাডভেঞ্চারের ক্ষেত্রে অতি সাবধানী? খুব একটা ঝুঁকি নিতে চান না?
➡কেউ এরকম ভাবতে পারে। আমার কথা হল, সামিট করতে গিয়ে যদি দলের একজন সদস্যও মারা যায় সেই এক্সপিডিশন সাকসেসফুল নয়; সামিট ক্লাইম্ব হলেও নয়।
◼ অমূল্য দা, গৌতম দত্তের কথা যখন উঠে এলো, আমরা এভারেস্ট প্রসঙ্গে আসি। আপনি ১৯৯৩ এর এক্সপিডিশনে লিডার ছিলেন। ওই এক্সপিডিশনে গৌতম দত্ত ছিলেন অন্যতম ক্লাইম্বার। গৌতম ‘৯১ এর দলেও ছিলেন।
➡হি ইজ অ্যান এক্সেলেন্ট ক্লাইম্বার।
◼ সেবারের এক্সপিডিশন নিয়ে গৌতমের বেশ কিছু অভিযোগ আছে। ওঁর বইতে ( চিনের পথে ভারতের এভারেস্ট অভিযান) সেই সব উল্লেখ আছে।
➡ শুনেছি।
◼ আপনি পড়েন নি?
➡ পড়া হয়নি।
◼ ওঁর অভিযোগ মূলত দুটি, এবং দুটিই আপনার বিরুদ্ধে।
➡যেহেতু আমি লিডার ছিলাম।
◼ ওঁর একটা অভিযোগ হল – আপনি লোয়ার ক্যাম্পে বসে ভালো দিনগুলি নষ্ট করেছেন। তখন মুভ করলে অনেক আগে নর্থ কলে পৌঁছে যেতেন, সামিট হয়ে যেত।
➡কোনো লিডার কখনো এরকম করতে পারে না, সবাই চাইবে ভালো আবহাওয়ার সুযোগ নিতে; আমি তো চাইবই। দেখ সুদর্শন পর্বতে প্রথম ভারতীয় অভিযান আমার নেতৃত্বে হয়েছিল। আমরা ক্লাইম্ব করেছিলাম রেকর্ড সময়ে, একদিনও বিশ্রাম না নিয়ে। এখন আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠছে। এরকম কিন্তু হয়নি। ভালো দিন নষ্ট করেছি – এটা ঠিক নয়। তবে হ্যাঁ অ্যাক্লেমেটাইজ করার জন্য কিছু দিন আমরা নিয়েছি, সে তো নিতেই হবে।
◼ গৌতমের দ্বিতীয় অভিযোগ – নর্থ কলের পর তার সাথে চূড়ান্ত অসহযোগিতা শুরু হয়।তাঁকে অক্সিজেন সিলিন্ডার, মাস্ক ইত্যাদি দেওয়া হয়নি; ফলে তিনি সময়ে মুভ করতে পারেন নি। তাঁর বক্তব্য – উনি সমর্থ ছিলেন,আবহাওয়া ভালো ছিল, অথচ তাঁকে সামিট ক্যাম্পের জন্য মুভ করতে দেওয়া হয়নি।
➡ আমি যতদূর জানি গৌতম সিলিন্ডার-মাস্ক ছাড়াই উঠে গিয়েছিল। নেক্সট মুভ করার জন্য তার কী কী দরকার সে নিয়ে যায়নি। এভাবে সে উঠে গেল কেন?
◼ উনি চেয়েছিলেন, দেওয়া হয়নি। আপনি জেনেও নাকি নীরব থেকেছেন, কিছু করেননি।
➡ কে দেয়নি তাকে? ইকুইপমেন্ট ইনচার্জ কে ছিল? -অতনু, অতনু চ্যাটার্জী। ওরা তো পরস্পরের বন্ধু। সেখানে এটা ঘটবে কেন?
◼ কিন্তু ঘটেছে তো?
➡ঠিক কী ঘটেছে, আমি বলতে পারবো না। তবে এটা বলতে পারি সেবারে যারা দলে ছিল তারা প্রত্যেকেই ছিল এফিসিয়েন্ট, কেপেবল্। ওরা একসাথে বহু অভিযান করেছে, নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া খুব ভালো। বলা যায়, এভারেস্ট অভিযানের পক্ষে আদর্শ একটা দল। ওরাই এভারেস্ট করতে পারত। বরং, আমিই ওদের সঙ্গে সেভাবে পরিচিত ছিলাম না।
◼ তাহলে অভিযান সফল হল না কেন?
➡ সে তো একই কথা বলতে হয়, টাকার জন্য।
◼ দলের ভিতরের সমস্যার জন্য নয়?
➡আদৌ নয়। আমি তোমাদের বলছি – আমরা যদি আর এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে পারতাম, মানে নর্থ কলে, সামিট হয়ে যেত। তার জন্য দরকার ছিল চাইনিজ অথরিটির সাথে যোগাযোগ এবং দশলক্ষ টাকার ব্যবস্থা। তখন আমাদের পক্ষে দুটোই ছিল অসম্ভব।
◼ অসম্ভব কেন?
➡আমাদের সঙ্গে সে ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না; আর টাকার তো প্রশ্নই নেই। কে দেবে টাকা? কোথা থেকে? আসলে আমাদের একরকম সিডিউল তো হয়েই ছিল – নির্দিষ্ট দিনে ইয়াক আসবে, গাড়ি আসবে। ওই সিডিউল চেঞ্জ করার স্কোপ কোথায়?
◼ তার মানে ওই সিডিউল অনুযায়ী আপনারা ফ্যাগ-এন্ডে দাঁড়িয়েছিলেন?
➡হ্যাঁ।
◼ তাহলে তো ধরে নিতে হচ্ছে আগে যথেষ্ট সময় নষ্ট হয়েছে। গৌতম দত্তের অভিযোগ তাহলে উড়িয়ে দেবার নয়।
➡ শোনো গৌতম সম্পর্কে বলি, আমার সম্পর্কে ওর যাই মনোভাব থাকুক না কেন- আমি খোলামনে বলছি, হি ইজ ওয়ান অফ দি ফাইনেস্ট মাউন্টেনিয়ারস অফ দা স্টেট; স্ট্রং, এফিসিয়েন্ট। ও সামিট করতে পারত। কিন্তু ও একটু বেশিমাত্রায় অ্যাডভেঞ্চারাস। সময় নষ্ট হবার ব্যপারে দুটো কথা বলার আছে। প্রথমত – খারাপ আবহাওয়ার জন্য অনেকগুলো দিন আমাদের বসে থাকতে হয়েছে, মুভ করতে পারিনি। দ্বিতীয়ত -শেরপারা যথেষ্ট কেপবল্ ছিল না। নর্থ কলে পৌঁছতেই অনেক বেশি সময় লেগে যায়; আরও সময় লেগে যায় মাল ফেরি করতে।
◼তাহলে ওদের সিলেক্ট করা হল কেন ?
➡আমি করিনি।শেরপাজ ওয়ার সিলেক্টেড বাই নওয়াং গোম্বু।আমি তো দলেই ছিলাম না। এক সপ্তাহের নোটিশে আমি চলে যাই।
◼ হ্যাঁ, আমরা জানি, প্রথমে লিডার নির্বাচিত হয়েছিলেন মানিক ব্যানার্জী।
➡ হ্যাঁ, মানিক শেষ মুহুর্তে যেতে পারল না। আমাকে যেতে হল। আমি যদি গোড়া থেকে দলের সাথে যুক্ত থাকতাম, তাহলে ব্যাপারটা অন্যরকম হত। শেরপা সিলেকশন আমি নিজে করতাম। অন্যান্য ব্যাপারেও—
◼ আপনি কিন্তু বলেছেন এই দলটা আদর্শ দল ছিল।
➡ ঠিক। ৯১-র দলটার কোনো প্রস্তুতি ছিল না; তুলনায় এই দলটা অনেক বেশি অর্গানাইজড ছিল, অনেক বেশি তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এসএআই-তে দীর্ঘদিন কন্ডিশনিং ক্যাম্প হয়েছে, প্রি-এভারেস্ট ক্লাইম্ব হয়েছে। কিন্তু কিছু ল্যাপস্ তারপরেও হয়ত ছিল। অর্গানাইজেশন পার্টে আমি থাকলে সেই ল্যাপস্গুলো ঠিকঠাক করে নেওয়া যেত।
◼ না, তাহলে আপনি কোনটাকে ব্যর্থতার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন? আবহাওয়া খারাপ? টাকার অভাব? দলের ভিতরে সমস্যা? না, প্রথম থেকে আপনার দলে না থাকা?
➡ প্রথমত – আবহাওয়া খারাপ, সুতরাং টাকার অভাব। ওয়েদার খারাপ হলেও আমরা ওয়েট করতে পারতাম। টাকার অভাবে পারিনি। আমাদের সঙ্গে কোরিয়ানরা ছিল। দে ওয়েটেড অ্যান্ড দি ডিড দি সামিট। সেবারে একমাত্র কোরিয়ানরাই সাকসেসফুল হয়েছিল; কারণ ওদের ছিল উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থ; ওরা অপেক্ষা করেছিল। আমরাও পারতাম।
◼ তাহলে দলের ভিতরে সমস্যা?
➡খুব সাংঘাতিক কিছু ছিল বলে আমি মনে করি না।সাকসেস আসলে এসব কথা উঠত না।
◼ কিন্তু আপনার কাছে অভিযোগ করা হয়েছিল, আপনি নাকি কোনো ব্যবস্থা নেননি।
➡আমার কাছে কোনও কমপ্লেন ছিল না, থাকলে আমি নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নিতাম।
◼ সমস্যা একটা হচ্ছে এটা তো আপনি জানতেন?
➡হাইয়ার ক্যাম্পে দুই সহযোদ্ধার মধ্যে কী ঝগড়া হচ্ছে, কী মনোমালিন্য হচ্ছে, তা আমার জানার কথা নয়।
◼ ব্যপারটা নেহাত ঝগড়া মনোমালিন্য নয়; একজন আরোহী তার সাথী কে আরোহনের সরঞ্জাম দিচ্ছে না – এটা তো মারাত্নক একটা সিচুয়েশন!
➡যদি সত্যি এরকম হয়ে থাকে, তাহলে এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক, এরচেয়ে নিন্দনীয় আর কিছু হতে পারে না।
◼ এরকম যদি হয় তাহলে এভারেস্ট কেন, কোনো মেজর সাকসেসই আসবে না।
➡ সম্পূর্ণ একমত।
◼’৯৫ এর দল সম্পর্কে একটু বলুন।
➡ ওটা সম্পর্কে কী বলবো? ওয়ান ম্যান টিম। একজন ক্লাইম্বার। সাতজন শেরপা। অতনু চ্যাটার্জি ওয়াজ দি লিডার অ্যান্ড অনলি ক্লাইম্বার।
◼ এরকম হলো কেন?
➡কেউ যাবে না যে ওর লিডারশিপে।
◼ কিন্তু কেন ?
➡ জানি না। অতনু কে জিজ্ঞেস করতে পার। তবে এটা ঠিক, হি ওয়েস্ট ভেরি ক্লোজ টু দি সামিট, দো হি কুড নট মেক ইট।
⏺ অমূল্য দা, এভারেস্ট বিজয়ের ৫০ বছর পূর্ণ হল। এরমধ্যে ১২০০ জনেরও বেশি মানুষ সামিট করেছেন, যার মধ্যে ৫০ জনের বেশি ভারতীয় আছেন; কিন্তু বাংলার কেউ আজ পর্যন্ত সেখানে পা রাখতে পারল না। কবে পারবে?
➡সুনার অর লেটার,যেকোনও দিনই পারতে পারে। এভারেস্ট কে কংকার করা যাবে না, কেউই তা পারে না; তবে সামিট করার লোক বাংলায় আছে। সঠিক উদ্যোগ আর পর্যাপ্ত অর্থের যোগান থাকলে পারবে।
◼ ৫০ বছর পূর্তিতে এইচএমআই থেকেও এক্সপিডিশন হয়েছে। দলে অতনু ছিলেন। এখন পর্যন্ত যে খবর এসেছে দেখছি সামিটারদের মধ্যে অতনুর নাম নেই। সামিট করেছে সেই কুশান শেরপা, আর একজন সিকিমের নাদরে দোরজি।
➡অতনু সামিট-বিডার হিসাবে সিলেক্টেড হয়নি – এটা ধরে নিচ্ছি।
◼ কেন হয়নি?
➡জানি না। এখান থেকে কী করে বলব? দেখ, এসব নিয়ে বৃথা চিন্তা করে লাভ নেই। শুধু এভারেস্ট নিয়ে পড়ে থাকা, এভারেস্ট না হলে জীবন ব্যর্থ – এসব ছাড়তে হবে।
◼ অমূল্য দা, আমাদেরও মনে হয়, ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলা থেকে যদি নন্দাদেবী বা কাঞ্চনজঙ্ঘায় সফল অভিযান করা যেত তাহলেই একটা ঐতিহাসিক কাজ হত।
➡এখনো করা যায়।সেটাই ভাবা উচিত।
⏺ অনেকক্ষণ আমরা এভারেস্ট নিয়ে আছি।
➡হ্যাঁ, এবার এভারেস্ট ছেড়ে চল।
◼ হ্যাঁ, অমূল্য দা, আমাদেরও বাড়ি ফেরার সময় হয়েছে। আফটার অল, আমরা সমতলের লোক।
➡ আমরা সবাই। সেইজন্যই বোধহয় খেয়াল করেছ কি জানি না, যে কজন এভারেস্টে উঠেছে, আমাদের দেশ থেকে, হয় আর্মির লোক, নয় পাহাড়ের লোক। এই দেখ,আবার এভারেস্ট এসে গেল।
◼ না, এবারে অন্য প্রশ্ন। এখন অমূল্য সেনের কাজ কী?
➡ এখন তো আমি ন্যাশানল অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর। এই ফাউন্ডেশন হচ্ছে স্কুল গোয়ার্সদের জন্য। ওদের জন্য বছরের বিভিন্ন সময়ে রক ক্লাইম্বিং, ট্রেকিং, আদার অ্যাডভেঞ্চার – এসবের ব্যবস্থা করতে হয়। ক্লাস সেভেন থেকে টুয়েলভ্ পর্যন্ত সবাইকে নিয়ে যাওয়া হয়। দেশের সমস্ত অংশ থেকে ছেলেমেয়েরা আসছে। এটা একটা বড়ো কাজ। আইএমএফ এর মিটিং অ্যাটেন্ড করা একটা কাজ। এছাড়া যে যেখানে ডাকে আমি চলে যাই – এটাও কাজ।
◼ অমূল্য সেনের এই মুহূর্তে স্বপ্ন কী?
➡ একটাই- অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস কে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া।হ্যাঁ, অবশ্যই হিমালয়ে টেনে আনা। কেননা এটাই সবচেয়ে বড়ো রাস্তা।
⏺ কীসের?
➡আজকের যত অবক্ষয় থেকে মুক্তি পাবার, মুক্তি দেবার। অ্যাডভেঞ্চার তোমাকে শুধু সাহসী করবে না , সংগ্রামী করবে; তোমার দুনিয়াটা অনেক বড়ো হয়ে যাবে, আদর্শবোধ জাগবে। বড়ো কাজ, কঠিন কাজ সহজ করে করতে শেখাবে। আমার আরও একটা স্বপ্ন আছে। ভারতের সমস্ত রাজ্যগুলি দিয়ে – গ্রাম, শহর, নদী, পাহাড়, জঙ্গল দিয়েএকটা লম্বা ট্রেক – ছোটো বড়ো সবাইকে নিয়ে। ইন্টিগ্রিটির জন্য এটা বোধহয় খুব বড়ো কাজ হবে।
◼ আপনার স্বপ্ন সফল হোক। আর এই স্বপ্ন আমরাও দেখতে চাই। আপনার স্বপ্নের তো কোনো কপিরাইট সমস্যা নেই?
➡ (ফের হাসি) কপিরাইট কী বলছো? এ স্বপ্ন কেউ যদি দেখে সে তো আমার রয়ালটি পাওয়া হল।